ভারত-চীন সম্পর্কে উত্তেজনার অবসান ও ধীরে ধীরে পুনঃস্থাপনের ইঙ্গিত

 ২০১৮ সালে চীন সফরে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি

সীমান্তজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলমান থাকলেও ভারত ও চীন এখন ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও পারস্পরিক সন্দেহ ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এখনো দুই দেশের মাঝে রয়েছে, তবুও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বরফ গলার আভাস দিচ্ছে।

গত জুন মাসে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং চীন সফর করেন। তাঁরা সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)-র বৈঠকে অংশ নিতে চীন যান। বিশেষ করে রাজনাথ সিংয়ের এ সফর ছিল গত পাঁচ বছরে চীনে কোনো জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তার প্রথম সফর। এতে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা আবারও সচল হওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়।

দীর্ঘ ৩,৪৪০ কিলোমিটার অর্পিত ও অনির্ধারিত সীমান্তই দুই দেশের উত্তেজনার মূল উৎস। হিমালয় অঞ্চলের নদী, হ্রদ ও পর্বতসমূহের অবস্থানগত জটিলতায় সীমান্তরেখা অনেক সময় পরিবর্তিত হয়ে পড়ে, যার ফলে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয় এবং তা কখনো কখনো সংঘর্ষে রূপ নেয়।

২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষ ছিল এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা, যেখানে ২০ জন ভারতীয় ও ৪ জন চীনা সেনা নিহত হন। ওই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে একাধিকবার আলোচনা হলেও অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয়।

সম্প্রতি দিল্লি ও বেইজিং সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালু করেছে এবং ২০২০ সালের পরোপার্জিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। এ বছরের শুরুতে ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের তিব্বতের কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর দর্শনের অনুমতি দেওয়াও সম্পর্ক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গত বছর দুই দেশ লাদাখের কয়েকটি বিবাদপূর্ণ অঞ্চল নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছায়, যা দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার পথে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

চীন বর্তমানে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। বিশেষ করে বিরল খনিজ ও প্রযুক্তি খাতে ভারতের চীন নির্ভরতা ব্যাপক। এ কারণে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা শুধু কূটনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় চীন কৌশলগতভাবে দিল্লির সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন চায় না হিমালয় সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হোক, কারণ তাইওয়ানসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও তাদের মনোযোগ বিভক্ত।

Next Post Previous Post