ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাত: ইরানের পাল্টা হামলার নেতৃত্বে আয়াতুল্লাহ খামেনি

 


ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের কালিবাফ এক সাক্ষাৎকারে জানান, ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনি যুদ্ধকক্ষ থেকে ইরানের পাল্টা হামলার পুরো পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর হামলার কারণে মাত্র ১২ দিনের মধ্যে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছে।

১৩ জুন ভোররাতে ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলা চালায়, যার প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের শীর্ষস্থানীয় জেনারেলরা নিহত হন। বিশ্লেষকদের মতে, পাল্টা হামলা রোধের জন্য এই লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ড করা হয়েছিল। তেহরান টাইমস জানায়, হামলার আগে মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে পারমাণবিক আলোচনা চলাকালীন সময় যুদ্ধের আশঙ্কা নেই।

কিন্তু ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সংঘটিত হয়, যা যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ায়। কালিবাফ বলেন, খামেনি দ্রুত নতুন কমান্ডার নিয়োগ দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন, ঠিক যেমন ১৯৮০-এর দশকে ইরাক-ইরানের যুদ্ধের সময় করেছিলেন।

ইসরায়েলের বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খামেনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন, যেখানে তিনি ইসরায়েলকে তাদের অপরাধের ‘মূল্য দিতে হবে’ বলে সতর্ক করেন। পাল্টা হামলায় ইরান অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েল প্রচেষ্টা চালিয়েও আসল ক্ষয়ক্ষতি লুকাতে পারেনি। মার্কিন বিশ্লেষকরা ধারণা করেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ জানায়, ইসরায়েলের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হয়েছে।

তেল আবিবের কিরিয়া কম্পাউন্ডের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়সহ গোয়েন্দা সংস্থা আমান, মোসাদের সদর দপ্তর, বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও তেল শোধনাগারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কালিবাফ দাবি করেন, ইসরায়েল নিহতের সংখ্যা কম প্রকাশ করছে; প্রকৃত সংখ্যা ৫০০’র কাছাকাছি হতে পারে।

তেহরান ও ওয়াশিংটনের চলমান পারোক্ষ কূটনৈতিক আলোচনার মাঝপথে যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে কালিবাফ ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে অভিহিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে ইরানের পাল্টা হামলায় ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ হয়, যার মধ্যে ৬টি সঠিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, সব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। যদিও এপি জানিয়েছে, আল উদেইদ ঘাঁটির একটি গম্বুজাকৃতির কাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, যেখানে গোপন সামরিক যোগাযোগ সরঞ্জাম ছিল।

Next Post Previous Post