আতিথেয়তা শেষ, শুরু দমন: আফগানদের দলে দলে ইরান ছাড়ার হিড়িক
ইরানে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ আফগান নাগরিকের জন্য দুশ্চিন্তার সময়কাল শেষ হলো গতকাল। কারণ, ইরান সরকার বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ৬ জুলাই শেষ হয়েছে। যাঁরা এই সময়ের মধ্যে দেশ ছাড়েননি, তাঁদের গ্রেপ্তার ও জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছে তেহরান।
ইরান সরকার ২০২৩ সাল থেকেই দেশটিতে ‘অবৈধভাবে’ বসবাসরত বিদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। চলতি বছরের মার্চে জানানো হয়—যেসব আফগান নাগরিকের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাঁদের ৬ জুলাইয়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ করতে হবে, নইলে জোরপূর্বক বিতাড়ন করা হবে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৭ লাখের বেশি আফগান নাগরিক ইরান ছেড়েছেন। শুধু জুন মাসেই প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার আফগান শরণার্থী দেশে ফিরে গেছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সর্বশেষ ১২ দিনের সংঘাতের পর থেকে এই সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজারে পৌঁছেছে, যেখানে আগে ছিল গড়ে দুই হাজার।
ইরানে আফগান শরণার্থীদের বিরুদ্ধে এই কঠোর অবস্থানের পেছনে রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ। গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের পর দেশটিতে জনমনে নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আফগানদের একাংশকে নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেছেন,
“আমরা সব সময় ভালো আতিথেয়তা প্রদানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু সবকিছুর আগে জাতীয় নিরাপত্তা। তাই স্বাভাবিকভাবেই, যাঁরা অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তাঁদের ফিরে যেতে হবে।”
তেহরানে বসবাসরত আফগান বংশোদ্ভূত রেস্তোরাঁ মালিক বাতুল আকবরি বলেন,
“লোকজনকে এমন একটি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেটিকে তাঁরা চিরকাল নিজের বলে জেনেছেন। এটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।”
বাতুলের জন্ম ইরানে হলেও তাঁর মা–বাবা আফগানিস্তান থেকে এসেছেন। তাঁর ভাষায়,
“আমাদের মনে হয়, আমাদের দুটি দেশ আছে। কিন্তু এখন আমরা কোথাওই নিরাপদ নই।”
ইরান ছাড়তে বাধ্য হওয়া একজন শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাসিম মেজাহেরি বলেন,
“বিতাড়নের এই প্রক্রিয়া বহু পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। কেউ মা–বাবা ফেলে গেছে, কেউ ভাই–বোনের সঙ্গে সম্পর্ক হারাচ্ছে।”