সেনাসদস্যরা গুমে জড়িত প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রেষণে (ডেপুটেশনে) বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সেনাসদর। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘প্রেষণে কর্মরত সেনাসদস্যরা যে সংস্থাগুলোর অধীনে কাজ করেন, সেগুলো সরাসরি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। তবে কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ এসেছে, যার তদন্ত বর্তমানে চলমান। প্রমাণ মিললে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার ওপর সহিংসতার ঘটনায় ছয়জনকে চিহ্নিত করা হয় এবং তাঁদের একজনকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। তিনি জামিনে মুক্তি পেলেও, আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী সেনাবাহিনীর এখতিয়ার সীমিত ছিল বলে উল্লেখ করেন কর্নেল শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী অতীতেও জনদুর্ভোগ ও সহিংসতা দমনে সক্রিয় ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবরোধ ও সহিংসতার ঘটনায় সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একইভাবে কুমিল্লার মুরাদনগরে নারী নির্যাতনের ঘটনার পর পরিস্থিতি শান্ত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করে সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, এটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয় এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার ভিত্তিতে সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলির ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ২০ শতাংশ উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে।
সাম্প্রতিক অভিযানে সেনাবাহিনী ২৬টি অবৈধ অস্ত্র এবং ১০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। আগস্ট ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ৯,৬৯২টি অবৈধ অস্ত্র এবং ২,৮৬,৮৫৪টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ১৫,৬৪৬ জন অপরাধী, যার মধ্যে কিশোর গ্যাং ও মাদক সংশ্লিষ্টরাও রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিগত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও ২৩ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। ইউপিডিএফের একটি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়। রাঙামাটিতে অভিযানে একজন সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হন। সেনা অভিযানের ফলে বান্দরবানের পালিয়ে যাওয়া ১৩৮ জন বম জনগোষ্ঠী পুনরায় তাঁদের এলাকায় ফিরে এসেছেন।
আজ ভোরে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএফ) বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে সংগঠনটির দুজন সদস্য নিহত হন। সেনাবাহিনী জানায়, এদের মধ্যে একজন ‘মেজর’ পদবীর কমান্ডার। অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৩টি এসএমজি, ১টি চায়নিজ রাইফেল, ৩৬৪ রাউন্ড গুলি এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম। অভিযান চলমান রয়েছে।