সীমান্তে কাঁটাতারের ফাঁকে আটকে গেল এক মা–ছেলের সম্পর্ক

 

বিদায়ের মুহূর্ত ছিল তা। তপ্ত রোদের নিচে কালো বোরকায় দাঁড়িয়ে সায়রা শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন স্বামী ফারহানের হাত। পাশে তাঁদের নয় মাস বয়সী সন্তান আজলান। জায়গাটি আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত, যেখানে একদিকে ভারতের আত্তারি গ্রাম, আরেকদিকে পাকিস্তানের ওয়াঘা। এই ফাঁকটুকুই বিভাজন, যেখানে থমকে গেলো এক পরিবার।

তিন বছর আগে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে নয়াদিল্লির বাসিন্দা ফারহান ও পাকিস্তানের করাচির সায়রার প্রেম, পরে তা পরিণয়। সায়রা ভারতে চলে আসেন, শুরু হয় সংসার। কিন্তু রাজনীতি ও সহিংসতার ছোবলে আজ তাঁদের পরিবার ছিন্নভিন্ন।

কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেয়। সেই সূত্রেই সীমান্তে পৌঁছান সায়রা ও ফারহান, সঙ্গে তাঁদের সন্তান।

সায়রা নিজ দেশে ফিরবেন, কিন্তু সন্তান আজলান ভারতের নাগরিক হওয়ায় নিরাপত্তারক্ষীরা জানান—‘বাচ্চাটি যাবে না।’ মায়ের কোলে থাকা শিশুকে কেড়ে নেওয়া হয় কেবল একটি পাসপোর্টের রঙের কারণে—সবুজ বনাম নীল। কাঁদতে কাঁদতে সন্তানকে ফারহানের হাতে তুলে দেন সায়রা। বিদায়বেলায় ফারহান বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ, খুব শিগগির দেখা হবে।’

এই এক দৃশ্যেই যেন ফুটে ওঠে দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েন কতটা নির্মমভাবে সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হাজারো মানুষ আজ বিচ্ছিন্ন—কে যেনো বিয়ে ছেড়ে ফিরছেন, কেউ চিকিৎসা না পেয়ে, কেউ মায়ের মুখ না দেখেই বিদায় নিচ্ছেন।

আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত একসময় যোগাযোগের প্রতীক হলেও এখন হয়ে উঠেছে বিরহ আর ব্যথার প্রতিচ্ছবি। সেখানে আর শুধু দুই দেশ নয়—বিচ্ছেদ ঘটে ভালোবাসার, সন্তানের, আশায়। 

Next Post Previous Post